ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বৈরী আবহাওয়া, সেন্টমার্টিনে আটকা হাজারো পর্যটক

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :: বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় দেশের সব সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে আসা তিন হাজার পর্যটক ফিরতে পারেনি।

সোমবার সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এসব পর্যটকদের আরো একদিন দ্বীপে থাকতে হবে।

এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। এ কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। অন্যদিকে দুঘর্টনা এড়াতে দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের সৈকতে নামানোর বিষয়ে মাইকিং করে সর্তক করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘সমুদ্র উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যেতে দেওয়া হয়নি। যেসব পর্যটক টিকিট কেটেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণে আসা দ্বীপে অবস্থানকারী পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সৈকতে পর্যটকদের না নামতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কক্সবাজার-টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন ৮টি জাহাজে করে ৪-৫ হাজারেরও বেশি পর্যটক প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে যান। জাহাজগুলোর মধ্যে ৭টি টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন, ১টি কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন এবং আরেকটি চট্টগ্রাম-সেন্ট মার্টিন রুটে যাতায়াত করে। এসব জাহাজে করে দ্বীপে ভ্রমণে আসা হাজারো পর্যটক সেখানে অবস্থান করছেন।

প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে আসা ঢাকার এক ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, পরিবার নিয়ে দ্বীপে ভ্রমণে এসে আটকা পড়েছি। শুধু আমি নই, বেড়াতে এসে অনেকেই আটকা পড়েছেন। সমুদ্র উত্তালের কারণে আজ কোন জাহাজ দ্বীপে আসেনি। ফলে আমাদের আরও একদিন দ্বীপে অবস্থান করতে হবে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের ট্রাফিক সুপারভাইজার জহির উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, দ্বীপে বেড়াতে এসে হাজারো পর্যটক ফিরতে পারেনি। এই রুটে টেকনাফ থেকে ৭টি জাহাজ চলাচল করে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ফের জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের টেকনাফের ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, সমুদ্র উত্তাল থাকায় কোনো জাহাজ দ্বীপে যায়নি। দ্বীপে বেড়াতে এসে অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

দ্বীপের স্থানীয় সাংবাদিক মো.জয়নাল আবেদিন জানান, ‘বৈরী আবহাওয়ার জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপে ভ্রমণে আসা হাজারো পর্যটকদের দ্বীপে অবস্থান করতে হচ্ছে। তারা বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে নিরাপদে আছেন। তবে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন।’

দ্বীপের নীলদিগন্ত নামের হোটেলের ম্যানেজার সাইফুর রহমান জানান, হোটেল শতাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। বেশিরভাগই দুই দিনের জন্য বেড়াতে এসেছিলেন। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তারা এখানে আটকা পড়েছেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপে বেড়াতে এসে হাজারো পর্যটক আটকা পড়েছেন। তাদের কাছ থেকে কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে সেজন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশপাশি বৈরী আবহাওয়ায় কোনো পর্যটক যাতে সমুদ্রে গোসল করতে না নামেন, সে-বিষয়ে বীচ কর্মীদের মাধ্যমে পর্যটকদের সর্তক করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: